দরপত্র ছাড়াই পরিত্যক্ত স্কুল ঘর বিক্রি

মো: ওয়াসিম হোসেন, স্টাফ রি‌পোর্টার:
ঢাকার ধামরাইয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন পরিত্যক্ত টিনের ঘর টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের যোগসাজশে বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো: মোশাররফ হোসেনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি স্কুলের বিপক্ষে সংবাদ পরিবেশন করতে নিষেধ করেন। প্রতিবেদন না করার জন্য একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে ফোনও করান তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার নান্নার ইউনিয়নের ৮১নং নান্নার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরির কারণে পুরাতন টিনের ঘর গোপনে টেন্ডার ছাড়াই বিক্রি করে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে কার কাছে স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়েছে সে বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি।
২০১৯ সালে সাবেক ইউএনও মো. সামিউল হকের সময়ে সঠিক দাম যাচাই বাছাই না করে ২২ হাজার টাকায় টেন্ডার হয়। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় যারা জামানত জমা দিয়েছিলেন তারা দাম না হেকে জামানতের টাকা উঠিয়ে নেন। তখন পরবর্তীতে আবারও টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে টেন্ডার হয়নি। এই সুযোগে গত শনিবার লোকজনের অগোচরে গোপনে টেন্ডার ছাড়াই স্কুলের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন স্কুলের প্রায় সব টিন বিক্রি করে কয়েকটি ভাঙ্গা টিন রেখে দিয়েছে স্কুল কমিটি। কিন্তু বড় ডালাই ভ্যানে করে টিন নেয়ার সময় মানুষের চোখে ধরা পড়ে। কি করে সরকারি স্কুলের মালামাল বিক্রি করলো স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। মালামাল ক্রয় করতে আসা তিনজন লোকের মধ্যে একজন অসুস্থ হয়ে পড়ায় গাড়ির চাবি স্কুলের পাশে বাজারের এক চায়ের দোকানে রেখে চলে যায় হাসপাতালে।
ওই দিনই বিকেলে যারা স্কুলের মালামাল ক্রয় করেছে তারা এসে মাল টিন নিয়ে যায়। কিন্তু ওজন বেশি হওয়ায় এক ভ্যানে নিতে পারেনি। পরে দুই ভ্যান গাড়িতে ভরে মালামাল নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে স্কুলের সঙ্গেই বাজারের ব্যবসায়ী সালাম ফেরাজী বলেন, স্কুলের টিন বিক্রি করা হয়েছে ঘটনাটি সত্য। প্রায় ৮/১০ মণ টিন হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হানিফ ও আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের সামনেই স্কুলের টিন ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে গেছে। স্কুলের মালামাল কি করে বিক্রি হচ্ছে এবং এই টাকা স্কুলের কাজে লাগবে না নিজেদের পকেট ভর্তি হবে।
৮১নং নান্নার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালামকে পুরাতন স্কুল বিক্রি করার কথা বললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, আমি প্রধান শিক্ষককে পুরাতন স্কুল ভাঙ্গার মালামাল এক জায়গায় রেখে দিতে বলেছি। কোন ভাবেই সেই মালামাল তিনি বিক্রি করতে পারেন না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) তাজমুন নাহার বলেন, নান্নার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন টিন সিড বিক্রির জন্য টেন্ডার হয়েছিল। দাম বেশি থাকায় তখন বিক্রি হয়নি। দু’দিন আগেও ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিষয়টি আবার আমাকে বলায় আমি আবেদন দিতে বলি। এতে নতুন টেন্ডার হবে। তার আগেই স্কুলের মালামাল বিক্রি করে দেয়ার বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। এ বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেব। কোন ভাবেই তিনি স্কুলের জিনিস বিক্রি করতে পারেন না। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*