সাটু‌রিয়ায় সরকারি অনুদানের পুনর্বাসনের টাকা থে‌কে টাকা রে‌খে দিলো মেম্বার

মো: আব্দুস ছালাম (স‌ফিক), সি‌নিয়র স্টাফ রি‌পোর্টার:
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় নদী ভাঙন কবলিতদের নামে বরাদ্দ দেওয়া টাকা পাওয়ার পর তা থে‌কে অর্থ রে‌খে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে বরাইদ ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
সরকারি এ অনুদানের টাকা পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ ছিল। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যের নাম আবুল হোসেন। তিনি মাকারকুল এলাকার মৃত সইমুদ্দিনের ছেলে ও বরাইদ ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এলাকায় বেশ আলোচনার জন্ম হয়েছে।
এদিকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সুবিধাভোগীদের বিষয়টি অস্বীকার করার জন্য মানসিক চাপ দিচ্ছেন। এ ঘটনায় একজন নারী ওই ইউপি সদস্যের মানসিক চাপে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ২২টি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মধ্যে এগারো লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সম্প্রতি প্রত্যেকটি পরিবারের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। চেকের টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য আবুল হোসেন সুবিধাভোগীদের ভয় দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ছনকা গ্রামের আবদুর রশিদ বলেন, ব্যাংক থেকে আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আবুল মেম্বার আমাকে ভয় দেখিয়ে খরচাপাতির কথা বলে আমার কাছ থেকে বিশ হাজার টাকা নিয়েছে।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ছনকা গ্রামের পরাণ আলী বলেন, আমার হাতে আবুল মেম্বার পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে বিশ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে।
আরো কয়েকজন সুবিধাভোগী ব্যক্তির স্বাক্ষাৎকার নিয়ে চলে আসার পর ওই ইউপি সদস্য তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সুবিধাভোগীর স্ত্রী ও আরেক সুবিধাভোগীর মা জানান, মেম্বার সাব আমাদের বাড়িতে এসে বলে গেছে, কেউ জিজ্ঞাস করলে বলবেন মেম্বার টাকা ধার নিয়েছিল এখন টাকা ফেরত দিয়েছে। ওই ভুক্তভোগী আরো জানান, আমার স্বামীর কাছ থেকে বিশ হাজার ও ছেলের কাছ থেকে আরো বিশ হাজার টাকা নিয়েছে আবুল মেম্বার।
নদীতে বাড়ি ঘর হারিয়ে নিঃস্ব হওয়া এক নারীর ঠাঁই হয়েছে ছনকা আবাসনে। তিনি জানায়, খরচাপাতির কথা বলে মেম্বার আবুল আমার কাছ থেকেও বিশ হাজার টাকা নিয়েছে। অবশ্য তিনি এ কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেছিল।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা গ্রামের কমপক্ষে ৮টি পরিবারের কাছে অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন। তিনি সুবিধাভুগীদের কাছে বিভিন্ন খরচাপাতির কথা বলে টাকাগুলো আদায় করেছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আবুল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে এ প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি।
বরাইদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আহম্মদ আলী বলেন, সরকারি এসব প্রকল্পের টাকা কোন জনপ্রতিনিধি আত্মসাৎ করলে জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলে। এদের কারণে অনুদানের টাকা ভেস্তে যায়। তিনি ওই ইউপি সদস্যের শাস্তি দাবি করেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নদী ভাঙন কবলিত ২২টি পরিবারের জন্য এগারো লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি পরিবারকে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছে। কোন জনপ্রতিনিধি অনৈতিক সুবিধা নিলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. আব্দুল মজিদ ফটো বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। খোঁজ খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*