ধামরাইয়ে চলছে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি, ভোগান্তির স্বীকার সেবাগ্রহীতারা

মো: ওয়া‌সিম হো‌সেন:
ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর সাব-রেজিষ্ট্রারের ঘুষ বানিজ্য, স্বেচ্ছাচারিতা ও অসদাচরণের বিরুদ্ধে কর্মবিরতি ঘোষনা করে দলিল লেখা বন্ধ রেখেছে উপজেলার ১৪৭জন দলিল লেখক। তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে এ কর্মবিরতি পালন করে আসছেন। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে সেবাগ্রহীতারা। দলিল লেখকদের কর্মবিরতিতে গতকাল রোববার নববর্ষের প্রথম দিনে এবং মৌজার নতুন মূল্যে কোন দলিল রেজিষ্ট্রি হয়নি বলে জানা গেছে।
কর্মবিরতিতে থাকা দলিল লেখকদের অভিযোগ, সাব-রেজিষ্ট্রার আবদুল মতিন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাদের কর্মক্ষেত্রে। তিনি যখন তখন রেগে গিয়ে দলিল লেখকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে থাকেন। ঘুষ, অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে পারছেন না দলিল লেখকরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করলেই লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়।

দলিল লেখকদের কর্মবিরতিতে প্রতিদিন দূর দুরান্ত থেকে দলিল রেজিষ্ট্রি করতে এসেও ফেরত গেছেন সেবাগ্রহীতারা। এরমধ্যে বড় চন্দ্রাইলের তুলন আক্তার বলেন, গত বৃহস্পতিবার ও রবিবার দলিল করার জন্য ঘুরতেছি। কিন্তু রেজিষ্ট্রি করতে না পেরে বেশ সমস্যায় পড়েছি। একই কথা বলেন, আবদুল জলিল নামের এক ক্রেতা।
ধামরাই কালামপুর সাব-রেজিষ্ট্রার কার্যালয়ের দলিল লেখক কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক বদরুল আলমসহ একাধিক দলিল লেখকদের কাছ থেকে জানা গেছে , দলিল রেজিষ্ট্রি করাতে গেলে দলিল প্রতি লাখে এক হাজার টাকা, সাব কবলা দলিলে প্রতি লাখে তিনশত টাকা, খাজনার চেক না থাকলে এক হাজার টাকা, পাকা পর্চা না থাকলে এক হাজার টাকা, হেবা ঘোষণা দলিলে সেরেস্তা খরচ এক হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন তিনি। এছাড়া মিউটেশন না থাকলে দুই হাজার টাকা ও প্রতি শতাংশের জন্য ৪০টাকা, আম-মোক্তার নামা দলিলে এক হাজার টাকা, এছাড়া অতিরিক্ত তিন হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা, দানের ঘোষনা দলিলে এক হাজার টাকাসহ এক শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত তিন হাজার টাকা, ২০ শতাংশের বেশি হলে আলোচনা সাপেক্ষে ঘুষ নিয়ে থাকেন সাব-রেজিস্ট্রার আবদুল মতিন।
এছাড়াও মর্টগেজ দলিলে সেরেস্তা খরচ এক হাজার টাকা, ১০ লাখ পর্যন্ত তিন হাজার টাকা। এর বেশি হলে আলোচনা সাপেক্ষে। দান ও বেলওয়াজ দলিলে সেরেস্তা খরচ এক হাজার টাকাসহ প্রতি লাখে তিন হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে থাকেন তিনি। কমিশনের দলিল রেজিষ্ট্রি করলে ধামরাইয়ের মধ্যে দিতে হয় ১০ হাজার টাকা।
ধামরাইয়ের বাইরে তথা ঢাকা গিয়ে কমিশনের দলিল রেজিষ্ট্রি করলে তাকে দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। এসব ঘুষ বানিজ্য ও দলিল লেখকদের সাথে অসদাচরণ করায় দলিল লেখকরা গত বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। এ ছাড়া দুপুর ১২টায় অফিসে আসেন আর কাজ করেন রাত ৮টা পর্যন্ত।
সেবা গ্রহীতাদের কালক্ষেপন করে টাকা আদায় করার পর দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেন তিনি। এছাড়া সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন অফিস করে থাকেন। মন না চাইলেই কোন নোটিশ ছাড়াই ছুটি কাটান। বিপাকে পরতে হয় দলিল লেখক ও ক্রেতাদের।
সাব-রেজিষ্ট্রার আবদুল মতিন দলিল লেখকদের অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, নিয়ম নীতির কথা বললেই দলিল লেখকরা একজোট হয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে সেবাগ্রহীতাদের সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা রেজিষ্ট্রার সাবিকুন নাহার বলেন, অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দলিল লেখকরা কর্মবিরতি করছেন বলে তিনি শুনেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*