প্রতিদিন বাংলাদেশ, ঢাকা:
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও রিজিক বৃদ্ধির উসিলা হিসেবে কিছু ফজিলতময় দিন ও রাত নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। পবিত্র লাইলাতুল বরাত তার অন্যতম। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে একে লাইলাতুম মুবারাকাতুন বা বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরীফে রাতটিকে লাইলাতুম মিন নিসফি শাবান বা মধ্য শাবানের রজনী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত এই মহিমান্বিত রাতের পরিধি বিস্তৃত। ফারসি ভাষায় এ রাতকে শবেবরাত বা সৌভাগ্য রজনী বলে অভিহিত করা হয়। উপমহাদেশে রাতটি এ নামেই সমধিক পরিচিত। হাদিস শরীফে উল্লেখ আছে, রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী শাবান মাসে মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) অধিক সংখ্যক রোজা রাখতেন এবং মধ্য শাবানের দিবাগত রাতটি ইবাদত বন্দেগিতে অতিবাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রাত আসবে, তোমরা রাতে জাগ্রত থাকবে এবং পরদিন রোজা রাখবে। সূর্যাস্তের পর থেকে এই রাতে আল্লাহতায়ালা স্বীয় তাজাল্লিসহ নিকটবর্তী আসমানে অবস্থান করেন এবং বান্দাদের প্রতি এই আহবান জানাতে থাকেন: কোনো ক্ষমা প্রার্থী আছ কি, আমি তাকে ক্ষমা করে দেবো। আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থী, আমি তাকে রিজিক দান করবো। আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত, আমি তাকে বিপদমুক্ত করবো। ফজর ওয়াক্ত পর্যন্ত আল্লাহপাক এ আহবান জানাতে থাকেন।
এ রাতের মহিমা ও ফজিলত কত উচ্চ এ থেকেই তা সম্যক উপলব্ধি করা যায়। মহান আল্লাহর ক্ষমা, তার কাছ থেকে রিজিক, বিপদ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্য এ রজনী এক বিরাট সুযোগ এবং আল্লাহপাকই সে সুযোগ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তাঁর বান্দাদের জন্য। এ রাতে নিবিষ্টচিত্তে তার দরবারে তওবা করা, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করা, নফল নামাজ আদায় করা, দোয়া দরুদ পাঠ করা, দান খয়রাত করা, তসবিহ তাহলিল করা, মোনাজাত করা, পিতা মাতা ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা, কবর জেয়ারত করা এবং আল্লাহপাকের রেজামন্দি হাসিলের জন্য সারারাত ইবাদত বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকা বান্দার জন্য অপরিহার্য হিসেবে গণ্য। লাইলাতুল বরাতে আল্লাহর অসীম রহমত ও নৈকট্য লাভের এই সুযোগ থেকে খোদাভীরু বান্দারা নিজেদের বঞ্চিত রাখতে পারে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেছেন: যারা (অপরাধ করার পর অনুতপ্ত হয়) তওবা করে নিজেদের সংশোধন করে ও সত্য প্রকাশ করে আমি তাদের তওবা কবুল করি। আর আমি তওবা গ্রহণকারী ও করুণাময়। আরেক আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেন: হে রাসূল, আপনি আমার সব বান্দাকে বলুন, যারা নিজের ওপর নিজেরাই অপরাধ করে সীমা লংঘন করেছে, তারা যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ সব অপরাধ ক্ষমা করে দিতে পারেন। পবিত্র এই রাতে কয়েক শ্রেণির মানুষ যেমন মুশরিক, গণক, যাদুকর, ঈর্ষাপরায়ণ, অন্যায় ভাবে হত্যাকারী, আত্মীয়সম্পর্ক ছেদনকারী, পরস্পর শত্রু তাপোষণকারী, জালিম শাসক ও তার সহযোগী, বাদক, মদ্যপ, ধর্ষণকারী, পিতা মাতার অবাধ্যতাকারী ছাড়া সবাইকেই আল্লাহপাক ক্ষমা করে দেন।
বরকতময় এ রাতে যারা ইবাদত বন্দেগি করবে, তারা নিশ্চিতভাবেই সুফল লাভ করবে। ক্ষমা, বর্ধিত রিজিক এবং বিপদ মুসিবত থেকে মুক্তি লাভ করবে। ইমাম সুবকি (রহ.) তার তফসির গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জুমার রাতের ইবাদতের উসিলায় সারা সপ্তাহের গুনাহ মাফ হয়। লাইলাতুল বরাত নিয়ে আসে রহমত, মাগফিরাত ও পবিত্র শবে বরাত মুসলমানদের কাছে পবিত্র রমজানের আগমনী বার্তাও নিয়ে আসে। শাবান মাসের পরে আসে পবিত্র রমজান মাস। তাই শবে বরাত থেকেই কার্যত রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়।
ফারসি শব শব্দের অর্থ রাত আর বরাত অর্থ সৌভাগ্য। আরবিতে বলে লাইলাতুল বরাত বা সৌভাগ্যের রাত। হিজরি সালের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে মুসলিম উম্মাহ। আজ মঙ্গলবার রাতটিই পবিত্র শবে বরাত।
মহিমান্বিত এই রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় মহান আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ ও অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন।
পবিত্র শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের হালুয়া, ফিরনি, রুটিসহ উপাদেয় খাবার তৈরি করার প্রচলন রয়েছে। এসব খাবার আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও গরিব দুঃখীর মধ্যে বিতরণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান এবং আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
