ছদ্মবেশে ২০ বছর পা‌লি‌য়ে থাকার পর র‌্যা‌বের হা‌তে ধরা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী‌

মো: সোহে‌ল রানা খান:
মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপ‌জেলার চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত রুবেল হত্যা মামলার দীর্ঘ ২০ বছর বিভিন্ন ছদ্মবেশে পলাতক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ওমর আলীকে ঢাকা জেলার সাভার থানা এলাকা থে‌কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ৪ ।
গ্রেফতারকৃত ওমর আলী (৬৬) সিংগ‌াই‌রের গা‌জিন্দা গ্রা‌মের মৃত: সোলেমানের পুত্র।
র‌বিবার (২৪ আগস্ট) সকা‌লে র‌্যাব ৪ (‌সি‌পি‌সি ৩) মানিকগঞ্জ এর কোম্পানি কমান্ডার লে.কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে ম‌ধ্যে রা‌তের দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ৪ এর একটি চৌকস যৌথ আভিযানিক দল ঢাকা জেলার সাভার থানাধীন বলিয়ারপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তা‌কে গ্রেফতার ক‌রে।
সংবাদ বিজ্ঞ‌প্তি‌তে র‌্যাব জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামী ওমর আলী ও ভিকটিম রুবেল একই এলাকায় বসবাস করতো। ভিকটিম রুবেলের বাবা সামছুল হকের সাথে পূর্ব থেকেই জমি জমা নিয়ে ওমর আলীর বিরোধ চলছিল। ২০০১ সা‌লের ২৪ এ‌প্রিল জমির চাষাবাদকে কেন্দ্র করে ভিকটিম রুবেল ও ভিকটিমের বাবা সামছুল হকের সাথে আসামী ওমর আলীর কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। উক্ত হাতাহাতিতে আসামী ওমর আলী সামান্য আঘাত প্রাপ্ত হয়। উক্ত বিরোধের জের ধরে রুবেলকে জনৈক রওশন আলীর মাঠে একা পেয়ে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামী ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন মিলে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পাশের নালায় বস্তা বেধে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের বাবা সামছুল হক তার ছেলেকে কোথায় খুঁজে না পেয়ে সিংগাইর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়রী দায়ের করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের বাবা লোকমারফত জানতে পারে যে, সিংগাইর থানাধীন ধল্যা ইউনিয়নের গাজিন্দা সাকিনস্থ জনৈক রওশন আলীর মাঠের দক্ষিণ পাশের নালার মধ্যে বস্তা ভর্তি একটি লাশ পাওয়া গেছে। উক্ত খবর পেয়ে ভিকটিমের বাবা ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত লাশটি তার ছেলে রুবেল এর বলে সনাক্ত করে। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন সিংগাইর থানা পুলিশকে খবর দিলে সিংগাইর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি নালা হতে উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা সামছুল হক মিয়া বাদী হয়ে সিংগাইর থানায় বিবাদী ওমর আলী ও তার সহযোগী ইব্রাহিম, রাজ্জাক, হানিফসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনের এর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা হওয়ার পর আসামী ওমর আলী ও তার সহযোগী হত্যাকারী ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফকে সিংগাইর থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা ১৭ মাস কারাবাস শেষে জামিনে মুক্তি পায়। উক্ত হত্যা মামলায় ওমর আলী জামিনে মুক্তি পেয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। অত্র মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারনামীয় ওমর আলী, ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফ গণদেরকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। পরবর্তীতে চার্জশীটের ভিত্তিতে বিজ্ঞ আদালত উক্ত মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করেন এবং পর্যাপ্ত স্বাক্ষ্য প্রমাণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে রুবেল হত্যাকান্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে মানিকগঞ্জ জেলার বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা জজ চার্জশীটে অভিযুক্ত আসামী ওমর আলীকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন এবং অপর আসামী ইব্রাহিম, রাজ্জাক এবং হানিফকে মামলা থেকে খালাশ প্রদান করেন। পলাতক আসামী ওমর আলী মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে গত ২০ বছর যাবৎ পলাতক ছিল।
র‌্যাব ৪ (‌সি‌পি‌সি ৩) মানিকগঞ্জ এর কোম্পানি কমান্ডার লে.কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফ হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ৪ এর একটি যৌথ আভিযানিক দল সাভারের বলিয়ারপুর ‌থে‌কে তা‌কে গ্রেফতার ক‌রে। আসামী যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়াতে লোক চক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করে। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য পালিয়ে ঢাকা জেলার সাভার এলাকায় চলে যায়। গত ২০ বছর ধরে আসামী ওমর আলী ঢাকা জেলার আশুলিয়া ও সাভার থানা এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে আত্মগোপনে থেকে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*