সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকুর মানবিকতা

‌মোহাম্মদ সো‌হেল রানা খান:
সময়ে সময়ে আলোচনা সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তা আমরা ভুলে যাই।
পুলিশ বিভাগে রয়েছে এমন কর্মকর্তা যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।

‌তেম‌নি এক মান‌বিক পু‌লিশ কর্মকর্তা রংপুরে কর্মরত পুলিশের সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু।
পুলিশ জনগনের বন্ধু, শুধু ‌নি‌দিষ্ট দ্বা‌য়িত্ব পাল‌নে না, পেশাগত দ্বা‌য়ি‌ত্বের বাহিরেও নানা মান‌বিক কাজ ক‌রে তারই প্রমান দি‌য়ে চল‌ছেন সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু।
সম্প্র‌তি একটি অসহায় ছেলে রাফীর (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ) ‌কর্মের ব্যবস্থা করে দিয়েছে অাবা‌রো মান‌বিকতার প‌রিচয় দি‌য়ে‌ছে এ পু‌লিশ কর্মকর্তা।

মা হারা অন্ধ বাবার ৭ সন্তানের একজন (বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ম‌ানুষ) রাফী। পড়াশুনা বাদ দেওয়া এ ছে‌লে‌টির যার পা‌য়ে সমস্যার কার‌নে  কষ্টে হেটে চলাচল কর‌তে হয়। দরিদ্র রাফী‌কে দে‌খে মান‌বিক পু‌লিশ কর্মকর্তা জিকুর খেয়াল হলো রাফীর জন্য কিছু করার। রাফীর জন্য কাঠমিস্ত্রীকে দিয়ে নিজে দাড়িয়ে থেকে একটি ছোট আকারের ভ্রাম্যমান দোকান (সংগ্রাম) তৈরী করে দেন। তাতে পান, জর্দা, শুপারি, চিপস্, চকোলেট, চিউইংগাম, বাজারের ব্যাগ, বিস্কিট ও সিগারেট দিয়াশলাই সহ আরও কিছু পন্য দিয়ে সাজিয়ে বাজার কমিটির সাথে আলোচনা করে ব‌সি‌য়ে দেয় কাচা বাজার এলাকায়। দোকান সংগ্রাম প‌রিচালনা ক‌রে রাফী এখন সাধারন দিনে ৫০০/৭০০ টাকা আর হা‌টের দিনে ১৫০০/১৮০০ টাকা বেচা, বি‌ক্রি করে। রাফীর জন্য ২ টি ডিপিএস খুলে দিয়েছে এ পু‌লিশ কর্মকতা। রাফীর ২ বোনের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও নি‌য়ে‌ছেন তি‌নি।
গত ২১ ডি‌সেম্বর সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু তার ফেসবু‌কে ৩ টি ছ‌বি দি‌য়ে রাফীকে নি‌য়ে এক‌টি পোস্ট দি‌য়ে‌ছে, পোস্ট‌টি হুবহুব তু‌লে ধরা হ‌লো:

একজন রাফীর(বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষ) দায়িত্ব আমার……
মা হারা অন্ধ বাবার ৭ সন্তানের একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তান রাফী। স্কুল-ছাড়া মায়াবী চাহনীর হালকা গড়নের হেলেদুলে কষ্টে হেটেচলা হত-দরিদ্রের মতন বেশভুষার ছেলেটিকে দেখেই নিজেকে ওর জায়গায় দাড় করিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হলো।

সমাজ রাফীকে (প্রতিবন্ধী) বলে উপহাস করে আবর্জনার অস্তাকুড়ে ফেলে দিতে চায় মালুম করে আমার মতন সামান্য ছাপোষা কেরানীর খেয়াল হলো রাফীর জন্য কিছু করার। রাফীর জন্য কাঠমিস্ত্রীকে দিয়ে নিজে দাড়িয়ে থেকে একটি ছোট আকারের ভ্রাম্যমান দোকান (সংগ্রাম) তৈরী করে তাতে পান, জর্দা, শুপারি, চিপস্, চকোলেট, চিউইংগাম, বজারের ব্যাগ, বিস্কিট ও সিগারেট-দিয়াশলাই সহ আরও কিছু পন্য দিয়ে সাজিয়ে বাজার কমিটির সাথে আলোচনা করে কোন এক সকালে বসিয়ে দিয়েছিলাম কাচা বাজার এলাকায়। আপনাদের দোয়ায় রাফী এখন সাধারন দিনে ৫০০-৭০০ টাকা আর বাজারের দিনে ১৫০০-১৮০০ টাকা বেচা-কেনা করে।

আর এই বেচা-বিক্রই স্থানীয় ক্ষমতাশীল লোকজনের (যারা প্রতিটি দোকান স্থাপনের জন্য ১০-১৫ হাজার টাকা চাদা নিয়ে থাকে আর মাসোহারা তো আছেই) চোক্ষুশুল হলো। রাফীর কাছ থেকে কিছুই না পাওয়ায় তাকে উৎখাত করার জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকে কিন্তু আমিও ছেড়ে দেইনি কঠোর হস্তে দমন করেছি। রাফীর জন্য ২ টি ডিপিএস খুলে দিয়েছি। রাফীর ২ বোনের বিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমি নিয়েছি ইনশাহ্ আল্লাহ।
আমার মুল উদ্দেশ্য একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিকে প্রতিদিন একটি করে মাছ না দিয়ে তাকে একটি বড়শী কিনে দিয়ে মাছ ধরা শিখিয়ে দিলে সে নিজেই নিজের জন্য মাছ ধরতে পারবে।
আমার এই পোস্টটির মাধ্যমে একটি আন্দোলনের সুচনা করতে চাই আর তার শ্লোগান হলো “সমাজের অন্তত একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যাক্তির দায়িত্ব আমার”।
আল্লাহ্ আমাদের সুস্থ্য সবল রেখেছেন আর তাই আল্লাহ্ তায়ালার প্রতি শোকর গোজার করে অন্ততপক্ষে সমাজের একজন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যাক্তির দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বি করে তুলি।…..
অসহায়ের পাশে পুলিশ অফিসারের এমন ম‌নি‌বিকতা নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের ওই পোস্টে শত শত মানুষ মন্তব্য ক‌রে তার এমন মানবিক আচরণের প্রশংসা করেছে,
মো: জাহানুর ইসলাম সো‌হেল লি‌খে‌ছেন: স্যার ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করবো না। আপনাকে দেখে বিত্তবান অফিসারেরা শিখুক যারা টাকার পাহাড় গড়েছেন। মুখে নীতির কথা বলে বাস্তবে ভিন্নরুপ। প্রতারনা যাদের মূল হাতিয়ার। আপনার জন্য অনেক দোয়া রইল। আপনার অসহায় মানুষের জন্য দরদ আর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া দেখে অনুপ্রানিত হলাম। ইনশাআল্লাহ এমন মানুষদের জন্য সাধ্যের মধ্যে সামান্ন হলেও কিছু করবো কথা দিলাম।
ইব‌নে বিন ফয়সাল লি‌খে‌ছেন: আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাই সহজ সরল মনের মানুষ ভাই আমার আল্লাহ আপনার উপর এবং আপনার পরিবারের উপর রহমত নাজিল করুক (আমিন)।
দিপক বিশ্বাস লি‌খে‌ছেন: ভাই দোয়া ক‌রি অাপ‌নি সততা অার নিষ্ঠার সা‌থে সবার পা‌শে থা‌কেন। শুভ ক‌ামনা অাপনার জন্য।
আহমেদ ফারুক লি‌খে‌ছেন: আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আপনাকে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করার সুযোগ দিন।
জানা গে‌ছে, ঝিনাইদহের শৈলকূপার ছেলে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু, ২৯তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেলেও বাবার ইচ্ছায় পরে ৩০তম বিসিএস উত্তীর্ণ হয়ে যোগ দেন পুলিশ ক্যাডারে।
তবে এ পেশায় এসে অন্যের অন্যায় কাজকে সমর্থন না করায় বদলি হতে হয়েছে এক জেলা থেকে অন্য জেলায়। তারপরও অন্যায়ের সাথে আপোষ করেনি মান‌বিক এই পুলিশ কর্মকতা। জীবনের ছোট ছোট ব্যর্থতাকে তিনি নিয়েছেন শক্তি হিসেবে। সেখানেই পেয়েছেন নতুন উদ্যম, নতুন শক্তি।
এখন কর্মরত আছেন রংপুরে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার হিসেবে।
খুব বেশি কৌতুহলী এ পুলিশ কর্মকর্তা। সবকিছু জানার এক অদম্য আগ্রহ তার। আর তাই সবসময়ই চেষ্টা করেন নতুন কোন কিছু হলেই তার আদি অন্ত জানার।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করতে চান। আর তাই কর্মজীবনে যে জেলাতেই পোস্টিং হোক না কেনো, চান সেখানে একজন করে হলেও প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিতে। তাকে স্বাবলম্বী করে দিতে। জিকু মনে করেন এভাবে যদি বাংলাদেশের প্রতিটি সামর্থবান মানুষ একজন করে মানুষের দায়িত্ব নেয় তাহলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*