স্কয়ারে ভুল চিকিৎসায় প্রাণ সংশয়ে সাটু‌রিয়ায় সা‌বেক এসিল্যান্ড

অনলাইন ডেস্ক:
রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল পিত্তথলির পাথর অপারেশন করতে গিয়ে জীবন সংশয়ে পড়েছেন ৩০ তম বিসিএস ক্যাডারের প্রশাসনের কর্মকর্তা মা‌নিকগ‌ঞ্জের সাটু‌রিয়া উপ‌জেলার সা‌বেক সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) মো: নজরুল ইসলাম। তার অস্ত্রে ছিদ্র করে দিয়েছে স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা। কিন্তু সেই বিষয়টিও তারা রোগীকে জানায়নি।
বর্তমানে নজরুল ইসলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন র‌য়ে‌ছে। তাকে সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নজরুল ইসলাম সাটু‌রিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং ঢাকার ধানমন্ডি রেভিনিউ সার্কেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। সম্প্রতি তাকে সরকারি কর্ম কমিশনে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি সেখানেও সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।
এই সরকারি কর্মকর্তার ব্যাচমেট তৌহিদ এলাহী জানায়, ৩০তম ব্যাচের কর্মকর্তা মো: নজরুল ইসলাম গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের আইসিইউ তে চিকিৎসাধীন। গত ১৭ জানুয়া‌রি সে কমন বাইল ডাক্ট স্টোন রিমুভ করার জন্য স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। প্রফেসর ডা: এম এস আরফিন ERCP প্যাকেজ অফার করেন এবং বলেন রোগী ১৮ তারিখেই লিভ নিতে পারবে। অপারেশন এর পরে ডা: জানান অপারেশন সাকসেস্ফুল হয় নাই। বলেছে , টিউমার থাকতে পারে ম্যালিগন্যান্ট। স্টোন লোকেট করতে পারে নাই। কলোনোস্কোপি করতে হবে। ১৯ তারিখ এন্ডোস্কোপি ২০ তারিখ সিটি স্ক্যান করে। ২২ তারিখে প্রথমবারের মত স্বীকার করে ডিওডেনাম লিকেজ হয়েছিল । কিন্তু সেটা নাকি আবার সিল্ড হয়ে গেছে। পেশেন্ট নার্ভাস থাকার কারণে ততদিন পর্যন্ত কোন এন্টিবায়োটিক দেয়া হয় নি। কলোনোস্ককোপি করার কথা বলে কাল ক্ষেপন করা হয়। ভুলভাল তথ্য দেয়া হয়েছে। একেকবার একেক কথা বলে রোগীর আত্বীয়স্বজনকে কনফিউজড করা হয়। অপারেশনের সিডি চাইতে গেলে ডাকতার সাহেব ক্ষেপে যান। বলেন, এসব ডিলিট হয়ে গেছে, কম্পিউটার নষ্ট। স্কয়ার হস্পিটালের হার্ড ডিস্ক খালি নাই। পরবর্তীতে রোগীর উন্নতি না দেখে রোগীর আত্বীয়স্বজন অন্য থার্ড পার্টি কনসাল্টেশন এর পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে রেফার করে। ২৩ তারিখ রাতে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হয়েছে । গতকাল ২৯ জানুয়া‌রি হতে আইসিইউ তে আছে নজরুল। ৩০ জানুয়া‌রি তারিখে সকালে ডাক্তারদের বোর্ড শেষে জানানো হয়, তার ইন্টার্নাল ব্লেডিং হচ্ছে যা পায়খানার রাস্তা ও নাক মুখ দিয়ে বের হচ্ছে। ভেসেলেও তার প্রভাব পরছে। ছিদ্রটি সিল করতে হলে ওপেন সার্জারি করতে হবে যেটি রোগীর বিবেচনায় অধিকতর রিস্ক মনে করছেন। বিকল্প হিসেবে অবসার্ভ করছেন। তাদের পরামর্শ হল, সিংগাপুরে এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা দিয়ে লেজারের মাধ্যমে সিল করা সম্ভব। নজরুল সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজবেথে নেয়া হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সরকারের বিভিন্ন অফিস, প্রশাসন ক্যাডার, অন্যান্য ক্যাডার , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ডিপার্ট্মেন্ট এবং সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, রবিবার এই রোগী আমাদের এখানে এসেছেন। এখন তার অবস্থা শঙ্কাজনক। তিনি আইসিইউতে আছেন।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চিকিৎসকরা জানায়, অন্ত্রে তৈরি হওয়া ছিদ্রটি বন্ধ করতে হলে ওপেন সার্জারি করতে হবে যেটি রোগীর বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিবচেনায় ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তুসিঙ্গাপুরে এমন প্রযুক্তি রয়েছে যা দিয়ে লেজারের মাধ্যমে অন্ত্রের ছিত্র বন্ধ করা সম্ভব। তাই সেখানে যাওয়া ভালো। এই পরামর্শ জানার পর নজরুল ইসলাম‌কে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার চেষ্টা করছেন তার সহকর্মীরা। তারা এ জন্য টাকা পয়সা জোগাড় করার চেষ্টা করছেন।
নজরুল ইসল‌াম জীবন সংশয়ে থাকলেও বিষয়টি নিয়ে স্কয়ার হাসপাতালের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
যোগাযোগ করা হলে হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ক্লেমেন্ট বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই।
নজরুল ইসলাম‌কে স্কয়ার হাসপাতালের গ্যাস্ট্রো অ্যান্টোলজি বিভাগে যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন সেই অধ্যাপক এমএস আরেফিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রাজ্জাক  বলেন, স্যার এখন অনেক ব্যস্ত, কথা বলতে পারবেন না।
নজরু‌লের এমন কেন হয়েছে, জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন ব‌লেন, পিত্তথলির পাথর বের করতে গিয়ে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে।
তার ব্যাচম্যাটরা বলেন, এটা মেনে নেয়া যায় না। একটা হাসিমুখকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেয়া হলো। স্কয়ার হাসপাতাল চিকিৎসা ভুল দিলো, সাত দিন জানলো, পরে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে যেতে হলো। এখন শুনতে পাচ্ছি সেখানকার মেডিকেল বোর্ড বলছে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিতে।
সে  এখন আইসিইউতে। অথচ হাসতে হাসতে স্কয়ারে গিয়েছিল, তিন দিনের চিকিৎসা নিয়ে ফিরবে। সম্ভবত পিত্তে পাথর হয়েছিল। ইআরসিপি করতে গিয়ে তারা অন্ত্রে ছিদ্র করে ফেলল এবং রোগীকে জানালও না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে এসে সেখানকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে ধরা পড়ল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*